বাঘরোল হল একধরনের মাছ খেঁকো বিড়াল। এরা সাধারণত মাছ খেতে ভালোবাসে। তবে বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে বাসস্থানের বিলুপ্তি ঘটছে তাই ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে কোথায় মাথা গুঁজবে তা ভেবেই আকুল এই প্রানীর দল।
এই প্রানীর নাম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রানীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকার এইসব প্রানীর খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে কিনা তা ধোঁয়াশাই থেকে গেছে। তবে রাজ্যের কিছু গবেষক এই প্রানীদের নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে এবং সেই গবেষনায় জানা গেছে এই প্রানী ভবিষ্যতে বিলুপ্তির পথে।
‘দ্য ফিশিং ক্যাট’ নামে ওই প্রকল্পের সঙ্গে প্রধান তিয়াষা আঢ্য জানাচ্ছেন, ‘এই বাঘরোলকে অনেকে চোর বদনাম দেয় মাছ চুরি করার জন্য কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই প্রানীটি চোর নয়, সিসিটিভি ক্যামেরাতে স্পষ্টভাবে ফুঁটে উঠেছে, গভীররাতে জলা থেকে জাল দিয়ে মাছ চুরি করেছে গ্রামেরই লোক কিন্তু এর দায়ের কোপে পড়েছে বাঘরোলরা এবং তারা মানুষের ক্রোধের শিকার হচ্ছে, শুধু তাই নয় এই মানুষ চোরেরা ক্যামেরার ফাঁদ পাতা হয়েছে বুঝতে পেরে ক্যামেরার মেমরি কার্ড খুলে নিয়েছে। তবে সুব্রত মাইতি যিনি ক্যামেরা রাখার কাজের সাথে যুক্ত, তিনি জানিয়েছেন যে, এই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এমন কিছু মানুষ চোর যা দেখলে গ্রামবাসিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে, তাদের উপর।
গবেষক তিয়াষা জানান, ‘কোনো প্রানী তার দেহের ওজনের মাত্র ১০ শতাংশ খাবার খেতে পারে। তাই তিনি গবেষণা করে বলেন একটি বাঘরোলের পক্ষে এত মাছ খাওয়া সম্ভব নয় তাছাড়া এই প্রানীর বিষ্টা পরিক্ষা করে মেঠো ইদুরের দাঁতও পাওয়া গেছে সুতরাং এর থেকে বোঝা যায় এই প্রানী শুধু মাছ না মেঁঠো ইঁদুরও খেয়ে তার জীবনযাপন করে। সুতরাং গ্রামবাসীরা এই প্রানীদের উপর যে চোরের বদনামদেয় তা পুরোপুরি মিথ্যে।
ওই প্রকল্পের অন্যতম গবেষক প্রিয়াঙ্কা দাস জানান, হাওড়া এবং লাগোয়া হুগলীতে এখন মূলত জলাজমির খড়ি নেই তাই বাঘরোলের বাসস্থানও নেই, প্রধানত পানের বরজে ব্যবহারের জন্যই খড়িগাছের চাষ এই এলাকায় জনপ্রিয়ছিল, কিন্তু পানের চাহিদা কমে যাওয়ায় খড়ি কমেছে ফলে কোপ পড়েছে বাঘরোলদের বাসস্থানের উপর। বাঘরোলদের বাঁচাতে তাই পান ও খড়ি চাষের পুনরুজ্জীবনও দাবি করেছেন, তিয়াষরা।
হাওড়ার পাচলা এলাকার জীববৈচিত্র কমিটির সদস্য ইন্দ্রজিৎ আদক জানান খড়িবনের পাশাপাশি হোগলা বন এবং নিচু জমিতেও বাসা বেঁধেছে এই প্রানী কিন্তু প্রোমোটিং ও বিভিন্ন কারখানা দখল করছে এই সব এলাকাকে সুতরাং বিপদে পড়ছে এই প্রানীরাও।
পাঁচলা, দেউলপুরে বাঘরোলের সংখ্যা বেশ ভালো হলেও এইসব কারণে বাসস্থান নষ্ট হতে থাকলে কমতে পারে এই প্রানীর সংখ্যা।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য-প্রানীর তকমা পাওয়া এই পানী সংরক্ষনের দাবি তুলছেন গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা। তবে পর্ষদের একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে এই প্রানীর সংখ্যা আদতে কত এই তথ্য তাদের কাছে নেই, যেটা বিশেষ লজ্জার। এই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হওয়ায় নড়ে বসেছে পর্ষদ।
Leave a Reply